Different levels of atmosphere
Different levels of atmosphere
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস
☼ বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস [Layers of the Atmosphere] :- উচ্চতা, উষ্ণতা ও উপাদানের ভিত্তিতে পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন-
(১) ট্রোপোস্ফিয়ার, (২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার, (৩) আয়নোস্ফিয়ার (৪) এক্সোস্ফিয়ার এবং (৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ।
(১) ট্রোপোস্ফিয়ার [Troposphere] বা ঘনমণ্ডল:-
(i) ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ঊর্ধ্বের বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল বলে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি ।
(ii) মেরু অঞ্চলে [Poles] ট্রপোস্ফিয়ার প্রায় ৯ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত এবং নিরক্ষরেখার [Equator] ওপর ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা প্রায় ১৮ কিলোমিটার ।
(iii) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০% ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে 'ক্ষুব্ধ মন্ডল' বলে ।
(iv) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর । বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে থাকায় এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি ।
(v) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প বা মেঘ থাকে না বললেই চলে ।
(vi) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে থাকে । প্রতি কিলোমিটারে ৬.৪° বা প্রায় প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ কমে যায়, ‘একে উত্তাপ কমে যাওয়ার গড়’ (Average Laps rate of temperature) বলে । ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে ১০-১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমানায় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ –৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে –৬০° সেন্টিগ্রেড হয় ।
vii) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।
(viii) ট্রপো (Tropo) ইংরেজি শব্দটির অর্থ পরিবর্তন (Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় ।
(২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার [Stratosphere] বা শান্তমণ্ডল:-
(i) ট্রপোস্ফিয়ার-এর ওপরের ১৮ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলে ।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না ।
(iii) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে সাদা দাগ রেখে যায় ।
•ওজনস্তর:-
(i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের মধ্যে উপরের দিকে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের যে বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় ।
(ii) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি পর্দা আছে, যার ফলে সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত অতিবেগুনি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে না ।
(৪) এক্সোস্ফিয়ার [Exosphere]:-ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৪০ কিমি উপরের ঊর্ধ্বের বায়ূস্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরের বায়ু এত হালকা যে এই এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না ।
(৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার [Magnetosphere]:- এক্সোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে । এই স্তরের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নিত কণার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।
☼ এয়ারোনমি [Aeronomy]:- আবহবিদ্যায় ভূপৃষ্ঠের উপরে প্রায় ১০০ কি.মি. পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের স্তর সম্মন্ধে আলোচনা করা হয় । এর উপরে বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রয়েছে, সে সম্মন্ধে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়, তার নাম এয়ারোনমি ।
• ট্রোপোপজ [Tropopause]:- ট্রোপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার- এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগ স্থলকে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে থেমে যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোপজ অঞ্চলে নিরক্ষরেখার ওপর বায়ুর তাপমাত্রা -৮০° সেন্টিগ্রেড এবং মেরুদ্বয়ের ওপর -৪৫° সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে, কারণ মেরুদ্বয়ের ওপর যেখানে ট্রপোপজের উচ্চতা মাত্রা ৮ কিমি, সেখানে নিরক্ষরেখার ওপর ট্রোপোপজের উচ্চতা ১৮ কিমি । ট্রপোপজের স্তরে বায়ু চলাচল বা তাপীয় ফল তেমন দেখা যায় না, তাই এই স্তরকে স্তব্ধ স্তরও বলে ।
• স্ট্র্যাটোপজ [(Stratopause]:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যতই উঁচুতে ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং (উত্তাপ) ৫০ কিমি উচ্চতায় সর্বোচ্চ (০° সেন্টিগ্রেড) হয় । তবে ৫০ কিমির বেশি উচ্চতা থেকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু করে, অর্থাৎ তাপমাত্রার বৃদ্ধি থেমে যায় বা পজ করে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থা থাকায় এই অঞ্চলকে স্ট্র্যাটোপজ বলা হয় ।
মেসোস্ফিয়ার:- স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে । মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ স্তরের ওপর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে । ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতায় এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে (কম বেশি -৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি মেসোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।
• মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়- অর্থাৎ পজ করে, তাকে মেসোপজ বলে ।
No comments